প্রখ্যাত আণবিক বিজ্ঞানী রেজাউর রহমান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ছাড়েন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হন রেজাউর রহমান। সেদিনই তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর দুই দিন পর, অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরে শনিবার (২৫ অক্টোবর) তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্বজনরা জানিয়েছেন, রেজাউর রহমানের মরদেহ ল্যাবএইড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। ছোট মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর তার দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রেজাউর রহমান স্ত্রী হালিমা রহমান, দুই মেয়ে নীলাঞ্জনা রহমান, মঞ্জুলিকা রহমানসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
রেজাউর রহমান বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে ৩৫ বছর গবেষণা করেছেন। একসময় খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে পড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হিসেবে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। বিজ্ঞানবিষয়ক পাঠ্যবইসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞান গ্রন্থ লিখেছেন তিনি। লিখেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক অনেক প্রবন্ধও।
এছাড়া বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন রেজাউর রহমান। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফিরে আসা ফিরে যাওয়া, দেশান্তর, লাল সবুজের কত কহন, ছায়ারজনী, পরজীবী প্রাণী, উড়াল মাছির পানসি, অন্ধকারে নয় মাস, যাত্রার শেষ সীমানা, সাদা বরফ কালো বৃক্ষ এবং স্ফুলিঙ্গের আভাসহ আরও বেশ কিছু গ্রন্থ।
বিজ্ঞান বিষয়ে বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০২৪ পান রেজাউর রহমান। তিনি বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘তোমরা সত্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াও। সব জায়গায় সত্য আছে, তেমনি মিথ্যাও আছে। শুধু আমরা দেখতে পাই না। সত্য দেখার চোখ তৈরি করতে হবে। তাহলে দেখবে, যতটা চোখে দেখা যায়, জীবনটা তার চেয়েও বড়। দেখবে, অনেক মহৎ কাজের সুযোগ রয়েছে। তা আমাদেরই করার চেষ্টা করতে হবে।
রেজাউর রহমানের জন্ম ১৯৪৪ সালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসসি করেন ১৯৬৫ সালে। ১৯৭৫ সালে তিনি পড়াশোনা করতে যান চেক একাডেমি অব সায়েন্সেসে। সেখানে তিনি রেডিয়েশন বায়োলজি বিভাগে যোগ দেন। গবেষণা করেন ‘রেডিয়েশন এফেক্টস অন ইনসেক্টস’ নিয়ে।
১৯৭৯ সালে কীটতত্ত্বে পিএইচডি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন রেজাউর রহমান। ফলের মাছি পারসুয়েশন অব ফ্রুট ফ্লাই নিয়ে মৌলিক গবেষণা শুরু করেন। সেখান থেকে গবেষণার কাজে ভিয়েনা, যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে আবার দেশে ফিরে আসেন। ফ্রুট ফ্লাইয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের পিএইচডি করান।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.