মা-বাবা সন্তানের জীবনের সবচেয়ে বড় নেয়ামত। নামাজের পর তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহারই আল্লাহর কাছে সর্বোৎকৃষ্ট আমল; জান্নাত লাভের গ্যারান্টি। অথচ আমরা অনেকেই অজান্তে এমন কিছু আচরণ করি, যা আমাদের জান্নাতের পথ রুদ্ধ করে দেয়। পবিত্র কোরআন ও রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বাণীতে এসব ভুল সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আসুন, জেনে নিই তিনটি ভয়াবহ ভুল যা আমাদের আখেরাতের জন্য চরম লাঞ্ছনার কারণ হতে পারে।
১. কড়া দৃষ্টি ও বিরক্তি প্রকাশ
ভুল: সামান্য বিরক্তি বা মেজাজ খারাপ হলে মা-বাবার দিকে রাগ বা উষ্মার দৃষ্টিতে তাকানো। এটি অনেক বড় একটি ভুল। এই ভুল আল্লাহর রহমত থেকে দূরে ঠেলে দেয় এবং জান্নাতের পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ- ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; অতএব আমার প্রতি ও পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (মনে রেখ, তোমার) প্রত্যাবর্তনস্থল আমার কাছেই।’ (সুরা লুকমান: ১৪)
হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে প্রশ্ন করলো- আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন, সময় হলে সালাত পড়া। সে আবার প্রশ্ন করল, এরপর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। (সহিহ মুসলিম: ৮৫)
সমাধান: বিরক্তিতে নিজেকে সংযত রাখা, তাঁদের সামনে নরমভাবে কথা বলা এবং কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকানো উচিত। তাহলেই মিলবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
২. স্ত্রীর কথাকে অযৌক্তিকভাবে প্রাধান্য দেওয়া
ভুল: স্ত্রী বা সন্তানের আবদারে এমন কাজ করা, যা মা-বাবার কষ্ট বা অসন্তোষের কারণ হয়। এই ভুল আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। মা-বাবা যদি শুধু গুনাহ করার নির্দেশ দেয়, সেটি করা যাবে না, কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অন্যান্য বিষয়গওলো সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না। কিন্তু দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে...।’ (সুরা লোকমান: ১৫)
হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি নবী (স.)-কে জিজ্ঞেস করল- আমি কি জিহাদে যাব? তিনি বললেন, তোমার কি পিতা-মাতা আছে? সে বলল- ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, তাহলে তাদের (সেবা করার মাধ্যমে) জিহাদ কর। (সহিহ বুখারি: ৫৯৭২)
সমাধান: স্ত্রী ও সন্তানের হক আদায়ের পাশাপাশি মা-বাবার অধিকার ও অনুভূতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। তাঁদের সম্মান ও সন্তুষ্টিকে কোনোভাবেই উপেক্ষা না করা। তাহলেই মিলবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
৩. বার্ধক্যে মা-বাবার সেবায় অবহেলা করা
ভুল: মা-বাবা বৃদ্ধ বা দুর্বল হয়ে গেলে তাঁদের যত্ন, খোঁজখবর বা সেবা থেকে বিরত থাকা কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া। এটি অনেক বড় একটি ভুল। এই ভুল আপনার ইহকাল ও পরকালীন কল্যাণের সকল রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে। কোরআনের নির্দেশ- ‘আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্যকারো ইবাদত না করতে ও মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের উফ বলো না এবং তাঁদের ধমক দিয়ো না; তাঁদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ২৩)
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মা-বাবা উভয়কে বা একজনকে পেল এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না, সে ধ্বংস হোক!’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৫১)
সমাধান: বার্ধক্যে তাঁদের প্রতি অসীম ধৈর্য ধারণ করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পাশে থাকা এবং সর্বদা তাঁদের জন্য দোয়া করা। তাহলেই মিলবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
ভালোবাসা ও দোয়ার মাধ্যমে জান্নাতের পথে
মা-বাবা আমাদের জান্নাতের দরজা। তাঁদের সন্তুষ্টিই আল্লাহর সন্তুষ্টি। তাই আমাদের কর্তব্য- তাঁদের সেবায় আন্তরিক হওয়া, রাগ বা কষ্ট না দেওয়া এবং নিয়মিত তাঁদের জন্য দোয়া করা- رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا ‘রাব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি সাগিরা।’ অর্থ: ‘হে আমার রব! তাঁদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা ইসরা: ২৪)
পরামর্শ: আসুন, আজ থেকেই মা-বাবার প্রতি আচরণে পরিবর্তন আনতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, কারণ তাঁদের সন্তুষ্টিই আমাদের জান্নাতের চাবি।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.