রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বহুল প্রতিক্ষিত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।
ভোটগ্রহণের পর ক্যাম্পাস ঘুরতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্র ফাঁকা। তবে ডীনস কমপ্লেক্স, শহীদুল্লাহ কলা ভবন ও জুবেরী ভবনে শিক্ষার্থীদের কিছুটা লাইন দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপস্থিতি বাড়বে বলেই ধারনা করা হচ্ছে।
এর আগে ১৯৯০ সালে সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর আর শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি পাননি। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা রাকসু সচলের দাবিতে আন্দোলন করলেও প্রশাসনের কানে ওঠেনি। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এই ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচনে মোট ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার ৮৬০ জন প্রার্থীর পক্ষে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ভিপি, জিএস-এজিএসসহ ২৩টি পদে প্রার্থী আছেন ৩০৫ জন। সিনেট সদস্য প্রতিনিধির পাঁচটি প্রদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৫৮ জন। আর ১৭টি হল সংসদের ২৫৫ পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন ৫৫৫ জন।
মোট ভোটারের ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ ছাত্রী আর ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ ছাত্রী। ছয়পৃষ্ঠার ব্যালটে ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। ভোটগ্রহণের জন্য নয়টি অ্যাকাডেমিক ভবনে ১৭টি ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে।
৯৯০টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে ১৫০টি, রবীন্দ্র ভবনে ১৫০টি, মমতাজউদ্দিন কলা ভবনে ৭৫টি, সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিজ্ঞান ভবনে ১০০টি, ড. শহিদুল্লাহ কলা ভবনে ৬৫টি, জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান ভবনে ১৩০টি, জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবনে ১২০টি, জামাল নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান ভবনে ১০০টি এবং জুবেরি ভবনে ১০০টি বুথ রয়েছে।
এই নির্বাচনে প্রার্থীদের মোট ১১টি প্যানেল রয়েছে। আলোচনায় আছেন ভিপি পদের প্রার্থী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির। জিএস পদে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ফাহিম রেজার সঙ্গে লড়াই হতে পারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দীন আম্মারের। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের নাফিউল ইসলাম জীবনও আছেন আলোচনায়।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, বিকেল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রগুলো থেকে ৫টার মধ্যে ব্যালট বক্সগুলো কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে নেওয়া হবে। সেখানে ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা শুরু হবে। ফল ঘোষণা করতে প্রায় ১৭ ঘণ্টা লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।
জাল ভোট যাতে না হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশন ‘থ্রি ডাইমেনশনাল সিকিউরিটি’ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, ভোটারদের জন্য অমোচনীয় কালি থাকবে। তাদের ছবিযুক্ত আইডি কার্ড পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি তাদের একটি কিউআর কোড দেওয়া আছে, সেটিও যাচাই করা হবে। একজনের ভোট অন্য কেউ দিতে পারবে না। যতজন ভোটার, ততটিই ব্যালট ছাপানো হয়েছে।
ব্যালট ছাপানোর ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটা সংস্থাকে দিয়ে ব্যালট করিয়েছি যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র নিয়ে কাজ করে। তাদের ব্যালটের কাজটি পেতে আট ধরনের নিরাপত্তা প্রক্রিয়ায় পাশ করতে হয়েছে।’
সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত রয়েছে ২ হাজার ৩০০ পুলিশ সদস্য। এছাড়া ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র্যাব দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
নির্বাচন ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি প্রবেশ পথেই পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.