দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে টানা ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে কুড়িগ্রামে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী তিন দিন (১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর) জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে, ফলে নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র—চারটি প্রধান নদীর পানি প্রতিটি গেজ স্টেশনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ সময় সব নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পাউবো কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণকক্ষের প্রতিবেদন বলছে, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানির সমতল সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে। তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেও কুড়িগ্রামে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে দুধকুমারের নিম্নাঞ্চলে প্লাবন দেখা দিতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়েও টানা বৃষ্টি হয়েছে। এসব বৃষ্টির পানি সীমান্ত পেরিয়ে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে চাপ সৃষ্টি করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় আরও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
কুড়িগ্রামের সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার দুধকুমারপাড় সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলগুলো বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকার চরের মানুষ ইতিমধ্যে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে গবাদি পশু ও মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। তিস্তা ও দুধকুমারের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস রয়েছে। কুড়িগ্রামে বিশেষ করে দুধকুমারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তবে অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়লেও তা বিপদসীমা অতিক্রম নাও করতে পারে। আশা করা হচ্ছে, দুই-তিন দিন পর পানি নেমে যেতে শুরু করবে।
কুড়িগ্রামে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদ উপচে পড়ে। এর ফলে জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৭-৮টি উপজেলার মানুষ ছোট-বড় বন্যার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন। চলতি মৌসুমে এখনো বড় ধরনের বন্যা না হলেও সামনের কয়েক দিনে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.