কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে রাজকীয়ভাবে বিদায় জানানো হয়েছে। দীর্ঘ ৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনের অবসানকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিদায়ী শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িতে বসিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এক কিলোমিটার দীর্ঘ শোভাযাত্রাটি বালারহাট বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
পরে সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা. মাহতাব হোসেন, নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান মজি, সাধারণ সম্পাদক মুসাব্বের আলী মুসা, জামায়াতের সভাপতি সামচুল হুদা বাবুল, মেঘবাড়ী হাউজিং চেয়ারম্যান এমদাদুল মিলন, নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হাই, বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন, রাবাইতাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হোসেন আলী ব্যাপারী, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এনছার আলী প্রমুখ।
বিদায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ১৯৯৩ সালের ১ আগস্ট থেকে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করি। গত ১ সেপ্টেম্বর ছিল আমার শেষ কর্মদিবস। প্রিয় জায়গা ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। আজকের এ রাজকীয় বিদায় আমাকে অভিভূত করেছে। সবার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। অবসরে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সময় কাটাতে চাই, সকলের দোয়া চাই।
সভায় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র প্রভাষক জাহিদুল ইসলাম, আতাউর রহমান তাজুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো শিক্ষককে রাজকীয়ভাবে বিদায় জানানো হলো। এটি কেবল প্রতিষ্ঠানের নয়, পুরো অঞ্চলের শিক্ষাঙ্গণের জন্য এক গৌরবের দিন।
সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, আমি নিজেও এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলাম। প্রিয় শিক্ষককে এমন বিদায় দিতে পেরে গর্বিত বোধ করছি। শিক্ষা ও শিক্ষকের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ এখনো টিকে আছে, আজকের আয়োজনই তার প্রমাণ।
অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকে ৩২ বছর ধরে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন জাহাঙ্গীর আলম স্যার। আমার সাথে তার পথচলা ২১ বছরের। তিনি শুধু সহকর্মী নন, ছিলেন পরামর্শদাতা ও পথপ্রদর্শক। তার সুস্থতা ও সুন্দর জীবনের জন্য আমরা দোয়া করছি।”
আলোচনা সভা শেষে শিক্ষক-সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের অশ্রুভেজা চোখে তাকে ঘোড়ার গাড়িতে করে নিজ গ্রাম নাওডাঙ্গা বকুলতলায় পৌঁছে দেওয়া হয়। বিদায়ী মুহূর্তে গ্রামজুড়ে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষের আবেগঘন উপস্থিতি এই বিদায় অনুষ্ঠানকে পরিণত করে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তে।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.