অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনের ৬৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাকে অবৈধভাবে ‘ইসরায়েলি ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনপন্থি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, জেরুজালেমভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা অ্যাপ্লাইড রিসার্চ ইনস্টিটিউট–জেরুজালেম (এআরআইজে) বুধবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিষয়টি উন্মোচন করে। 'নাবলুস গভর্নরেটের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা: ইসরায়েলি দখল পরিকল্পনার খোলা মঞ্চ' শিরোনামের ওই রিপোর্ট বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি পর্যালোচনা করেছে।
এআরআইজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতি আলমোজ স্বাক্ষরিত একটি সামরিক নির্দেশনায় পশ্চিম তীরের ৬৩টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে ‘ইসরায়েলি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ৫৯টি নাবলুস গভর্নরেটে, ৩টি রামাল্লাহতে এবং ১টি সলফিট গভর্নরেটে অবস্থিত।
সংস্থাটি বলছে, ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোকে দখলের লক্ষ্য কেবল প্রশাসনিক বা আইনি নয়, বরং সুপরিকল্পিতভাবে ঐতিহ্য দখল ও বিকৃত করার অংশ। বিশেষ করে নাবলুস অঞ্চলের অধিকাংশ টার্গেটকৃত স্থাপনা অবৈধ ইসরায়েলি বসতি, আউটপোস্ট কিংবা অন্যান্য উপনিবেশিক স্থাপনার কাছাকাছি অবস্থিত। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক পরিচয় বিকৃত করে ইসরায়েলি বয়ানকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে বলে এআরআইজে অভিযোগ করেছে।
প্রতিবেদনটি আরও উল্লেখ করে, ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ‘ইসরায়েলি’ হিসেবে ঘোষণা করা আন্তর্জাতিক আইন ও দায়বদ্ধতার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়ের প্রতি সরাসরি হুমকি।
এআরআইজে দাবি করেছে, এতদিনে পশ্চিম তীরে ২ হাজার ৪০০টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নিজেদের বলে ঘোষণা করেছে। যদিও তারা এগুলো সংরক্ষণ ও সুরক্ষার দাবি তোলে, বাস্তবে তা ভূমি দখলের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে এসব স্থানকে সামরিক স্থাপনা, অবৈধ বসতি, আউটপোস্ট, পর্যটনকেন্দ্র কিংবা বিনোদনকেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়, যা কেবল ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
ফিলিস্তিনি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছেছে। তারা ১৮০টি বসতি ও ২৫৬টি আউটপোস্টে ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে ১৩৮টি কৃষি ও পশুপালন আউটপোস্ট।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় অন্তত ১ হাজার ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এদিকে গত বছরের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) পরামর্শমূলক মতামতে জানায়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব অবৈধ। আদালত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সব অবৈধ বসতি উচ্ছেদের আহ্বান জানায়।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.