রাজশাহীর ৪ জেলায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষের পানিবন্দী জীবন-যাপন করছেন। নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে এসব পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। অনেক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। বর্তমানে এসব জেলায় পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এর ফলে ভাঙন আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষ।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, এরপর রাজশাহী। কিছু বসতবাড়ি তলিয়েছে নাটোর ও নওগাঁয়। সরকারি হিসেবে রাজশাহীতে ১ হাজার ৭৩৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৪ হাজার, নাটোরে ৮০ ও নওগাঁয় ২৫ পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি।
সম্প্রতি পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়ন তলিয়ে যায়। এছাড়া সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতুলি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এসব ইউনিয়নের অনেক বাড়িঘর ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজাহার আলী জানান, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যায় শিবগঞ্জের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এ উপজেলায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১৩ মেট্রিক টন চাল ও ৭৫ বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ইউএনও নুরুল ইসলাম জানান, দুই ইউনিয়নে পানিবন্দী হয়েছে দুই হাজার পরিবার। প্লাবিত হয়েছে ৬০০ হেক্টর ফসলি জমি। চাল, শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট নিয়ে তারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বেসরকারি সংগঠনও এগিয়ে আসছে।
পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর বাঘা, পবা, গোদাগাড়ী ও চারঘাটের অনেক পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ থেকে এবারও অনেক লোকজন তাদের ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু নিয়ে এ পারে আশ্রয় নিয়েছেন। সবচেয়ে কষ্টে আছেন বাঘার চক নারায়ণপুর, পবার মিডিল চর ও চর মাজারদিয়ারের বাসিন্দারা। মিডিল চরের চারপাশ ডুবে গেছে। পানি ঢুকেছে বাড়িতে। চর মাজারদিয়া চরেরও সবগুলো ঘরবাড়ি হাঁটুসমান কিংবা একগলা পানিতে ডুবে গেছে। ফলে অনেকে গবাদিপশু নিয়ে এ পারে রাজশাহী শহরের বেতার মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। আর যারা আসতে পারেননি তারা চরেই কোথাও একটু উঁচু জায়গা পেলে সেখানেই গবাদিপশু ও শিশুদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই চরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম এখনও কোথাও যেতে পারেননি। রোববার সকালে একগলা পানি মাড়িয়ে তাকে পাশের আরেকটি ডুবে যাওয়া বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে আসতে দেখা যায়। মনোয়ারা বেগম বলেন, জন্ম থেকে তিনি এই চরেই বাস করছেন। ভাঙনের কারণে তাদের চারবার বাড়ি নতুন জায়গায় সরাতে হয়েছে। এবার না ভাঙলেও ডুবে গেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয় কি না, তা নিয়ে এখন আছেন আতঙ্কে।
রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, জেলায় পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৭ জন। এরমধ্যে বাঘা, চারঘাট, পবা, গোদাগাড়ী ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দুটি ওয়ার্ড রয়েছে। তারা এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৮৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৪ লাখ টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পদ্মা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। এবার বাড়তে বাড়তে পানি ১৭ দশমিক ৪৯ মিটারে উঠেছিল। এরপর শনিবার সকাল ৬টা থেকে পানি ধীরে ধীরে কমছে। রোববার দুপুর ১২টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৩৫ মিটার।
এদিকে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে গত শনিবার ভোররাতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার তালপাতিলা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের তালপাতিলা ও উত্তর চকরামপুর গ্রামের কমপক্ষে ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নওগাঁর রানীনগর ও আত্রাই এবং রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়।
নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জায়দুর রহমান বলেন, বাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে পানি টুকছে। এতে প্রায় ২০০ বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। সম্প্রতি লাগানো আমন ধান ডুবে গেছে। তবে মাত্র ২৫টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। অন্যরা সহায়তা পায়নি।
নাটোরের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম শাহা আলম মোল্লা জানান, লালপুর উপজেলায় পদ্মা তীরের ৮০টি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। বন্যা হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নাটোরের সবগুলো উপজেলায় মোট ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।#
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.