রাজধানীর উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বর্তমান গেজেটভুক্ত ড্যাপ (ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান) ২০২২-২০৩৫ বাতিলসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (আইএবি)। রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি আবু সাইদ এম আহমেদ।
তিনি বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে রাজউকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। তাই আজ আমরা জনগণের স্বার্থে এই দাবিগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। জনদুর্ভোগ এড়াতে, ভবিষ্যতের বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে এবং নির্মাণ শিল্পে যুক্ত লাখো মানুষের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক শক্তিই পারে একটি টেকসই, ন্যায্য ও উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে। আর সে জন্য এখনই প্রয়োজন গেজেটভুক্ত বর্তমান ড্যাপ বাতিল করে সংশোধিত, জনবান্ধব ও বাস্তবধর্মী একটি নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা।”
স্থপতি ইনস্টিটিউটের উত্থাপিত চার দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. গেজেটকৃত ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ বাতিল করা।
২. রাজধানী ও গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল, সহজলভ্য ও অংশগ্রহণমূলক ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন।
৩. প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বিবেচনায় দুর্যোগ সহনীয় মৌজা-ভিত্তিক ড্যাপ তৈরি ও তা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পর্যালোচনা।
৪. ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা (সাভার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ) নিয়ে পরিবেশবান্ধব, বৈষম্যহীন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নতুন ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন, যাতে জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, সেনদাই চুক্তি, শূন্য কার্বন নিঃসরণসহ সব আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ড. মাসুদ উর রশিদ বলেন, “ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ দলিলটি টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৩-এর আওতায় প্রণীত হলেও, শুরু থেকেই তা নিয়ে নানা স্তরের অংশীজনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল। অংশগ্রহণমূলক আলোচনা ও গণশুনানির অভাব, তথ্যের ঘাটতি ও প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতা নিয়ে আমরা বারবার উদ্বেগ জানিয়েছি। এরপর কিছু সংশোধনী আনা হলেও তা ছিল প্রহসনমূলক।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুবিধা নিশ্চিত করতেই তড়িঘড়ি করে এই ড্যাপ তৈরি করা হয়। এতে কৃষিজমি ধ্বংস, প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট, ভবন নির্মাণ অনুমোদনে দুর্নীতি, এবং বৈষম্যমূলক নীতি বাস্তবায়নের ফলে শহরের বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে গেছে।”
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, “ড্যাপ বাস্তবায়নের পর গত চার বছরে ঢাকার বাসযোগ্যতা সূচকে অবস্থান ১৩৮ থেকে নেমে ১৭১-তে এসেছে, যা প্রমাণ করে এই পরিকল্পনার ব্যর্থতা ও জনবিচ্ছিন্নতা।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএবি সহ-সভাপতি স্থপতি মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, স্থপতি নওয়াজীশ মাহবুবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.